গল্পের নাম: “ছায়া থেকে আলো”



ভূমিকা:

২০২৫ সাল। কলকাতার বুকে এক গরম দুপুর। বাতাস ভারী, যেন কারো অদৃশ্য শাসনের চাপে হাঁপিয়ে উঠেছে শহরটা। চায়ের দোকানে বসে অর্ণব ভাবছিল—সব কিছু কি এমনই চলবে? চায়ের কাপে শুধু দুধ-চিনি নয়, মিশে আছে অতৃপ্তি, রাগ, আর একটা প্রশ্ন—“দুর্নীতি থামবে কবে?”


অধ্যায় ১: চাকরির দালাল আর বেকারের কান্না

অর্ণব একজন মাস্টার্স পাস করা যুবক। বাবার পেনশনে কোনোরকমে চলে সংসার। সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিয়ে ক্লান্ত, কোথাও ডাকা হয় না। একদিন সে খবর পায়—স্থানীয় একজন নেতার ঘনিষ্ঠ লোক কিছু টাকায় চাকরি "ম্যানেজ" করে দিতে পারে।

সে গেল—এক ছোট্ট অফিস, ভেতরে এসি চলছে, বাইরেটা নোংরা, গন্ধে টেকা দায়।
একজন বলল,
—“চাকরি পেতে চাইলে তিন লাখ দিতে হবে। এই মাসেই যোগদান।”

অর্ণব জিজ্ঞেস করল, “এই টাকা কোথায় যাবে?”
লোকটা হাসল, “উপরের দিকেই যায় সব। এখানে কেউ ফ্রি-তে কিছু দেয় না।”
অর্ণব চুপ করে চলে এল।


অধ্যায় ২: হাসপাতালের হাহাকার

অর্ণবের মা অসুস্থ। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হল।
প্রথমেই শুরু হলো টাকা খাওয়ার খেলা—
• বেড পেতে হলে ৫০০ টাকা।
• নার্সের ভালো ব্যবহার পেতে হলে ২০০ টাকা।
• ওষুধ হঠাৎ নেই, বাইরে থেকে আনতে হবে।

হাসপাতালের এক আয়া বলল, “আমরা কি করব বাবু? উপরে সবাই ভাগ নেয়।”

অর্ণব হতবাক। মায়ের অসহায় মুখ দেখে সে চোখের জল চেপে রাখে। এই রাজ্য কবে ঠিক হবে?


অধ্যায় ৩: পাড়ার নেতা, বিল্ডার আর স্কুলের মাঠ

অর্ণবের ছোটবেলার খেলার মাঠটা আজ আর নেই। ওখানে এখন বহুতল উঠছে—‘নবযুগ রেসিডেন্সি’।
পাড়ার এক প্রবীণ বলল, “এই মাঠটা সরকারি ছিল, জানিস? স্কুলের অধীন। কিন্ত নেতা-বিল্ডার হাত মিলিয়ে কাগজ পাল্টে ফেলল।”
আরও বলল, “জন্ম সনদ থেকে শুরু করে টেন্ডার—সব কিছুতেই কাটমানি। আর কেউ কিছু বলতে পারে না।”

অর্ণব ভাবল—চুরি শুধু টাকার না, আমাদের ভবিষ্যৎ আর ইতিহাসও কেউ চুরি করে নিচ্ছে।


অধ্যায় ৪: প্রতিবাদের সূচনা

অর্ণব একদিন ফেসবুকে লিখল,

“আপনার ঘুষ দিলে কাজ হয়—এই যুক্তি মানলেই আমরা দুর্নীতির সহচর। বদল আনতে হলে আগে নিজের মানসিকতা বদলাও।”

প্রথমে সাড়া পেল না। তারপর ধীরে ধীরে কমেন্ট আসতে লাগল,
• “তুমি ঠিক বলেছ।”
• “এই বিষয়ে একটা টিম তৈরি হোক।”
• “চলো একটা ওয়েবসাইট করি—ঘুষ ও অনিয়ম রিপোর্ট করার জন্য।”

অর্ণব তৈরি করল এক অ্যাপ: “সত্যজিত”—যেখানে সবাই অন匿名ভাবে ঘুষ, জালিয়াতি, অনিয়মের ঘটনা রিপোর্ট করতে পারবে।


অধ্যায় ৫: সত্যের ঝড় ও সংঘাত

“সত্যজিত” অ্যাপ ভাইরাল হয়ে গেল। স্কুল শিক্ষিকা, চাষি, নার্স, হকার—সবাই ব্যবহার করতে শুরু করল।
বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য আসতে লাগল:
• কোথায় কত টাকা ঘুষ চলছে,
• কোন দপ্তরে ফাইল আটকে আছে,
• কোন আধিকারিক ফেক বিল পাস করছেন।

এই খবর পৌঁছে গেল মিডিয়ায়।
অর্ণবকে ডাকা হল প্রেস কনফারেন্সে।

কিন্তু বিপদও এলো।

রাতবিরেতে ফোন:
—“তুই থেমে যা, নয়তো পরিবার থাকবে না।”

ঘরে চিঠি এসে পড়ল, লেখা:
“তোকে শেষ করব।”


অধ্যায় ৬: আলো এসে পড়ল

অর্ণব পুলিশে জানাল। প্রথমে তারা চুপ করে থাকল।
কিন্তু কিছু সাংবাদিক, কিছু আইনজীবী, আর সাধারণ মানুষ মিলে আওয়াজ তুলল—
“সত্যের বিরুদ্ধে হুমকি মানে পুরো সমাজের বিরুদ্ধে হুমকি।”

সরকার বাধ্য হলো তদন্ত শুরু করতে।

একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এলো—১০ জন সরকারি কর্মকর্তা ও ৩ জন জনপ্রতিনিধির নাম যুক্ত দুর্নীতির মামলায়।

অর্ণবের অ্যাপের তথ্যকে আদালত স্বীকৃতি দিল “বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ” হিসেবে।


অধ্যায় ৭: বদলের বীজ

অর্ণব এখন শহরে-গ্রামে ঘুরে বেড়ায়।
স্কুলে যায়, কলেজে যায়, বলে—
“শুধু অভিযোগ করলে হবে না, প্রমাণ দিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
তার কথা এখন প্রচারিত হয় ইউটিউবে, সংবাদপত্রে, টক শো-তে।

অনেক স্কুলে এখন দুর্নীতি-বিরোধী ক্লাব হয়েছে।
পাড়ায় পাড়ায় হয়েছে ‘সচেতনতা সভা’।
লোকজন এখন জানে—RTI কী, কোথায় অভিযোগ করতে হয়, এবং কীভাবে ঘুষ না দিয়েও কাজ আদায় করা যায়।


উপসংহার: ছায়া থেকে আলোয় ফেরা

অর্ণব এখনো ধনীদের মত গাড়ি চড়ে না,
তবু তার পথচলায় আলো আছে।
সে জানে, পুরোপুরি দুর্নীতি হয়তো একদিনে যাবে না।
তবু যেখানেই একটাও ঘুষ বন্ধ হয়, সেখানেই জিত।

তার মুখে এখনো সেই পুরনো প্রশ্ন,
“তোমরা কি সত্যিই বদল চাও? তাহলে একা আমাকে দেখো না, নিজেও একটা দীপ জ্বালাও।”


 

  • পশ্চিমবঙ্গে দুর্নীতি ২০২৫

  • চাকরিতে কাটমানি

  • সরকারি হাসপাতালের ঘুষ

  • বাংলার দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন

  • অর্ণব সত্যজিত অ্যাপ

  • পশ্চিমবঙ্গে সচেতন নাগরিক

  • বাংলার ঘুষ-অনিয়ম



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন