এক গ্রামে ভূতের ভয়ঙ্কর উপদ্রব
মুর্শিদাবাদ জেলার এক প্রান্তিক গ্রাম— ভীমপুর। চারপাশে ঘন বন, মাঝে মাঝে শোনা যায় শিয়ালের ডাক, আর রাতে নাকি বাতাসেও কান্নার শব্দ ভেসে আসে। এই গ্রামটা সাধারণ চোখে যেমন শান্ত, তেমনি এর ভিতরে লুকিয়ে ছিল এক ভয়ঙ্কর ইতিহাস।
এই গ্রামে কেউ সূর্য ডোবার পর বাইরে বের হয় না। কারণ একটাই— "সাদা শাড়ি পরা মেয়েটি"। গ্রামের মানুষ বলে, সন্ধ্যার পর যে বাড়ি থেকে বের হয়, সে আর ফিরে আসে না।
কথিত আছে, আজ থেকে ১০০ বছর আগে, এই গ্রামে ছিল এক জমিদার। নাম রাজেন্দ্র ঘোষাল। অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও অহংকারী। তার বাড়িতে কাজ করত এক বিধবা নারী— সীমন্তিনী। সে ছিল রূপবতী, নিঃস্ব, এবং সরল। জমিদার একদিন সীমন্তিনীকে নির্যাতন করে খুন করে। এরপর সীমন্তিনীর আত্মা নাকি কখনো মুক্তি পায়নি।
তার মৃত্যুর পর থেকে গ্রামের মানুষ অদ্ভুত কাণ্ড ঘটতে দেখেছে—
-
রাত ১২টার পর ঝুমুর সুরে গান
-
সাদা শাড়ি পরা এক নারীকে মাঠে ঘুরতে দেখা
-
পুকুরে এক মহিলা চুল আচড়াচ্ছে, কাছে গেলেই হাওয়া
আমি রুদ্র, একজন লেখক ও ব্লগার। ভূতের গল্পে আগ্রহী হওয়ায় ভীমপুর গ্রাম সম্পর্কে অনেক শুনেছিলাম। একদিন ঠিক করলাম, যাবো সেদিন সন্ধ্যায়। স্থানীয় একজন গাইড নিলাম— নাম কেষ্ট দা।
সন্ধ্যা ৬টা, গ্রামে পৌঁছালাম। বাতাস ভারী, যেন কিছু একটা আটকে আছে আকাশে। কেষ্ট দা বললেন, "স্যার, সন্ধ্যার পর ঘর থেকেও বাইরে না বেরনোই ভালো।"
কিন্তু আমি রয়ে গেলাম। পুকুরপাড়ে একা বসে ছিলাম। হঠাৎ চোখের কোণে কিছু একটা নড়ল। সাদা কিছু। ফিরে দেখি— এক মহিলা দাঁড়িয়ে, মাথায় ভেজা চুল, পরনে সাদা শাড়ি। তার চোখ দুটো জ্বলছে যেন।
আমি দৌড়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করলাম। কিন্তু জানালার পাশে একটা হাত! তারপর…
পরদিন সকালে কেষ্ট দা আমাকে এক পুরনো কাহিনী শোনালেন।
"সীমন্তিনী মরেনি ঠিকঠাক। ওর লাশ জমিদার পুকুরে ফেলে দিয়েছিল। তখন থেকেই পুকুরটা অভিশপ্ত। প্রতি বছর, পৌষ মাসে, এক জনকে ও দাবি করে। আর যেই বাঁচতে চায়, তার আত্মাকে ধরে নেয়।"
কিন্তু প্রশ্ন হলো— কেন এখনো সেই আত্মা রয়ে গেছে?
কেষ্ট দা জানালেন— সীমন্তিনীর আত্মা প্রতিশোধ নিতে আসছে। সেই জমিদারের বংশধর আজও এই গ্রামে আছে।
সেদিন রাতে আমি আবার বাইরে গেলাম। কিছু একটা আমাকে টানছিল। পুকুরের কাছে পৌঁছেই দেখি— এক মহিলা বসে চুল আচড়াচ্ছে। আমি জ্ঞান হারালাম।
চোখ খুললাম এক পোড়া ঘরে। চারপাশে ছাই, জানলার বাইরে অন্ধকার। আমার পাশে বসে আছে সেই নারী।
সে বলল, “তুই কেন এসেছিস?”
আমি কাঁপতে কাঁপতে বললাম, “আমি শুধু জানতে চেয়েছিলাম তোমার সত্যি কাহিনী।”
সে বলল, “তাহলে শোন…”
সীমন্তিনী বলল, “আমি শুধু ভালোবাসা চেয়েছিলাম। কিন্তু জমিদার আমাকে অপমান করেছিল। সেই দুঃখ আমি ভুলতে পারি না। তাই আমি প্রতিটি বছর এক মানব আত্মাকে আমার সঙ্গে নিয়ে যাই। কারণ, আমি একা থাকতে চাই না।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি মুক্তি পেতে চাও না?”
সে বলল, “মুক্তি চাই, কিন্তু কেউ কখনো আমাকে সত্যিকারের ক্ষমা চায়নি।”
আমি বললাম, “আমি তোমার জন্য প্রার্থনা করবো। শান্তির প্রার্থনা।”
সে অদ্ভুতভাবে হেসে বলল, “তুমি আলাদা... হয়তো এবার আমার মুক্তি মিলবে…”
পরদিন সকাল। আমি একেবারে সুস্থ। পুকুরের জল শান্ত। গ্রামের মানুষ বলল, সেই রাতে আর কোনো কান্না বা পদধ্বনি শোনা যায়নি।
গ্রামের পুরোহিত বললেন, “তুমি ওর আত্মাকে শান্তি দিয়েছো। এখন এই গ্রামে নতুন সূর্য উঠবে।”
আমি ফিরে আসি, কিন্তু প্রতিদিন রাতে সেই সাদা শাড়ির মুখটা মনে পড়ে। সে কি সত্যিই মুক্তি পেয়েছে?
এই গল্পটি হয়তো বাস্তব নয়, অথবা হয়তো কেউ জানে না কতটা সত্যি। কিন্তু ভীমপুর গ্রামের মানুষ এখন আবার সন্ধ্যায় বাইরে হাঁটে। কেউ কেউ বলে, মাঝরাতে এখনো পুকুরপাড়ে সাদা শাড়ি দেখা যায়। তবে সে আর কাউকে আঘাত করে না। সে হয়তো এখন শান্ত।
📢 Follow Us:
🔗 Facebook: https://www.facebook.com/Biplabdasbipu24
📸 Instagram: https://www.instagram.com/technobipu24
📺 YouTube Channel: https://www.youtube.com/@Banglarbiplab04
📚 Read More Stories: https://banglarbiplab.blogspot.com
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন